ক্রিকেটে করোনাকালীন নিয়ম সংযোজন, বলে ব্যবহার করা যাবে না থুথু
স্পোর্টস ডেস্ক: থমকে আছে পুরো বিশ্ব। ভয়ংকর মহামারি করোনার ছোবলে প্রানহানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। থেমে আছে বিশ্বের সকল খেলাধুলাও। সেই মার্চে শেষ মাঠে গড়িয়েছিল ক্রিকেট। তাও দর্শক শূন্য গ্যালারিতে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড সিরিজ প্রথম ম্যাচ পরেই স্থগিত হয়ে যায়। তারপর থেকে বাইশগজে কোনো স্ট্যাম্প শূন্যে ওড়ে নি কিংবা দর্শক সারিতে ছয়ের বল ক্যাচ ধরে করেনি কেউ উল্লাস। কিন্তু এভাবে কতদিন। ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম একটানা এতদিন কোনো ক্রিকেট ম্যাচ মাঠে গড়ায়নি।
কিন্তু এবার সাহস করেছে ইংল্যান্ড আর উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। কুইন এর গানের মত করে বলা যায় “দ্যা শো মাস্ট গো অন”। আগামী জুলাইতে ইংল্যান্ড এ খেলার জন্য ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডে পা রেখেছে উইন্ডিজ দলের খেলোয়াড় রা। আইসিসি এর নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিন পূর্বেই অবস্থান করে কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প করতে হবে তাদের। যাতে করে কেউ আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়। করোনাকালিন সময়ের ক্রিকেট এর জন্য ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি ভারতীয় লিজেন্ড সাবেক স্পিনার অনিল কুম্বলে কে প্রধান রেখে কিছু নিয়ম প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। যার মধ্যে সবথেকে আলোচিত হচ্ছে বল উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে মুখের থুথু বা লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা।
টেস্ট ম্যাচে সাধারনত বল উজ্জ্বল রাখার জন্য মুখের লালা ব্যবহার করা হয়। তা নাহলে বলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে গেলে বলে কোনো ধরনের সুইং,রিভার্স সুইং পাওয়া সম্ভব না।কিন্তু আইসিসির প্রধান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পিটার হারকোর্ট জানান বলে লালা ব্যবহার করলে লালার মাধ্যমে কারো শরীরের ভাইরাস অন্যের শরীরে যেতে পারে। সুতরাং এটা ব্যাবহার মোটেও উচিত হবে না। তিনি লালার পরিবর্তে ঘাম ব্যবহারের পরামর্শ দেন। যদিও এটি বলারদের জন্যে মোটেই স্বস্তির খবর নয়। কারন লালা ব্যাবহারে বলের ওজন পরিবর্তন হতো না এবং বলের উজ্জ্বলতা বজায় থাকতো। কিন্তু ঘাম ব্যবহার করলে বলের ওজন বেড়ে যায় এবং উজ্জ্বলতাও অতটা থাকে না। তাছাড়া শীতপ্রধান দেশে তো ঘাম আসার সম্ভাবনাই নেই। তখন বলারদের কি ই বা করনীয়।
যেহেতু নিয়ম টি নতুন এবং বলারদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগবে সেহেতু আইসিসি কিছুটা সহনীয় উপায় অবলম্বন করবে। ম্যাচ অফিশিয়াল রা প্রথমে এমন ঘটনা দেখতে পেলে অর্থাৎ কেউ লালা ব্যবহার করলে প্রথম বার সাবধান করা হবে। কিন্তু এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শাস্তিস্বরূপ ব্যাটিং দলকে ৫ রান যোগ করে দেয়া হবে।
এই ইস্যুতে কিছু সাবেক এবং বর্তমান খেলোয়াড় রা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। পাকিস্তানি লিজেন্ডারি পেসার ওয়াসিম আকরাম মনে করেন এতে বলার রা রোবটে পরিনত হবে। তিনি বলেন “এটা বলারদের রোবটে পরিনত করবে।আসবে এবং সুইং ছাড়া বল করে। এটা আমার জন্য পরিহাসসূচক যেহেতু আমি বড় হয়েছি লালা ব্যবহার করে বল সুইং করাতে করাতে”। ঘাম ব্যবহার এর ফলে যে খুব একটা উপকার হবে সেটা তিনি মনে করেন না। তিনি আরো বলেন ” আমি বিশ্বাস করি যে তাদেরকে একটা উপযুক্ত সমাধানে পৌছাতে হবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম কোন উপাদান যেমন ভ্যাসলিন ব্যবহার করা যেতে পারে তবে সেটা কতখানিই বা হতে পারে। দেখা যাক ইংল্যান্ড বনাম উইন্ডিজ সিরিজে কি হয় কারন আমি কখনোই এমন অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে যায় নি।”
“ইন্ডিয়া টুডে” তে দেয়া সাক্ষাৎকারে হরভজন এর উক্তিতে “বল যখন বেশি পুরাতন হয়ে যাবে তখন সেটা ঘাম দিয়ে শাইন করা যাবে না। এতে বল আরো ভারী হয়ে যাবে। এটা কোনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে বলে আমি মনে করি না। বলে লালা ব্যবহার করা না গেলে বলাররা ম্যাচেই থাকতে পারবে না, বিশেষকরে সাব -কন্টিনেন্ট কন্ডিশনে। আপনার বল্টাকে তৈরি করতে হয় এবং সেটার জন্য লালা অপরিহার্য।
ভারতীয় স্পিনার রভিচন্দ্রন অশ্বিন ইন্সটাগ্রাম এ “দিল্লি ক্যাপিটালস” এর সাথে লাইভে বলেন “বলে লালা ব্যাবহার করাটা বলারদের স্বভাবজাত অভ্যাস। এটা পরিবর্তন করতে অবশ্যই সময় এবং অনুশীলন এর দরকার আছে।”
পাকিস্তানি হেড কোচ ও সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ -উল -হক মনে করেন এটা মোটেই খেলোয়াড়দের দের জন্য সহজ হবেনা। সবাই ক্রিকেটের শুরু থেকে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। হঠাৎ করে পরিবর্তন করা কষ্টসাধ্য। তিনি আরো বলেন “বলারদের কে মাস্ক অথবা সুরক্ষিত কিছু ব্যবহার করার জন্য বলা যেতে পারে যাতে করে তারা স্বভাবজাত ভাবে লালা ব্যবহার করতে না পারে।” ইউটিউব ক্রিকেট চ্যানেল ” ক্রিকেট বাজ “কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এগুলো বলেন।