আন্তর্জাতিকখেলাধূলা

ম্যাচ ফিক্সিং এর এপিঠ ওপিঠ | দাউদ ইব্রাহীম এর D-Company

ম্যাচ ফিক্সিং এবং D-Company দাউদ ইব্রাহীম। আন্ডারওয়ার্ল্ড এর ডন বলা হয় যাকে। ভারত থেকে শুরু। এরপর সমগ্র বিশ্বের পুলিশ যাকে খুজে হয়রান। কত টাকার মালিক সেটা তিনি নিজেও হয়ত একবারে বলতে পারবেন না। তার এই বিপুল পরিমান অর্থের যোগানদান এর অনেকাংশ আসে ক্রিকেট ম্যাচ এর ফিক্সিং এর মাধ্যমে।

দাউদ ইব্রাহীমের হয়ে যারা ম্যাচ ফিক্সিং এ অবদান রাখেন তাদের সমন্বয় করে তৈরি তার D-Company। D-Company এর কাজ ই ম্যাচ ফিক্সিং জনিত সকল কাজ সামলানো। রয়েছে প্রশিক্ষিত এজেন্ট। যারা খুব সুনিপুণ ভাবে এবং চরম পর্যায়ের গোপনীয়তা রক্ষা করে ম্যাচ ফিক্স করার কাজটি করে থাকেন।

কিছু দূরন্ত ও সাহসী সাংবাদিকদের সাহসিকতায় মাঝে মাঝে সত্য উন্মোচিত হয়ে যায় সবার সামনে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে আল-জাজিরার স্টিং অপারেশন এর মাধ্যমে ধরা পড়া আনিল মানোয়ার এর নাম।

ক্রিকেট মৌসূমে ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাজির ব্যাপ্তি অনেক।PL কে কেন্দ্র করে তো কত মানুষ ধনী থেকে ফকির আবার ফকির থেকে ধনী হয়েছেন। বাজি সাধারণত শখের বশে ধরা হয়। কিন্তু সেখানে বিনিয়োগ করা টাকা যদি নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যায় তাহলে বেপারটা কেমন হয়। বাজিকর দের পক্ষে এই কাজটাই করে থাকে D-Company। কিছু কিছু ম্যাচ সম্পুর্ণ তাদের স্ক্রিপ্টেড থাকে বা কিছু ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত। বা কিছু ওভারের রান আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। এই তথ্য গুলোই বাজিকর দের কাছে পৌছে দিয়ে D-Company এর একাউন্টে জমা হয়ে যায় কোটি কোটি ডলার।

সাধারণত প্রতিটা ম্যাচের পূর্বে দলের গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ারদের সাথে পরিকল্পনা শেয়ার করা হয়। এই তথ্যগুলোই D-Company এর এজেন্ট রা সংগ্রহ করে আর্থিক লোভ দেখিয়ে অথবা ব্লাকমেইলিং করে। ২০১৮ সালে সবথেকে বেশি ক্যাপ্টেন ফিক্সিং সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন। যদিও কাকতালীয় ভাবে তারা সবাই ই আনিল মানোয়ারের গ্রেপ্তারের আগে বা পরে তথ্য প্রদান করে। ধারণা করা যেতেই পারে আনিল মানোয়ার এর গ্রেপ্তারের ফলে তারা কিছুটা হলেও অনিরাপদ অনুভব করেছিল।

ফিক্সিং সাধারণত ২ ধরনের।

প্রথমত, পুরো ম্যাচের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত থাকে। যেকোন দলের মূল্যবান খেলোয়াড়দের পক্ষে নিয়ে এই ফলাফল নির্ধারন এর পরিকল্পনা করা হয়। ৮০/৯০ এর দশকে এমন ছিল। এখন আধুনিক যুগে এ ধরনের ফিক্সিং প্রায় অসম্ভব।

দ্বীতিয়ত, ফিক্সিং হলো স্পট ফিক্সিং। বুকিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী প্রায় ৬০/৭০% ম্যাচেই স্পট ফিক্সিং হয়। দেখা গেলো ম্যাচের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে হঠাৎ রানরেট বেড়ে গেল বা কমে গেল। অথবা অস্বাভাবিক নো বল বা ওয়াইড বল। ফিক্সিং এর সবথেকে স্মার্ট অপশন স্পট ফিক্সিং। কম সময়ে বা কম ঝুকিতে আয় করা যায় অনেক টাকা।

মাঝে মাঝে খেলোয়াড়রা প্রভাবিত না হলে ম্যাচ অফিশিয়াল বা পিচ কিউরেটর দের প্রভাবিত করে D-Company এর এজেন্ট রা। আর্থিক লোভে তাদের সাথে হাত মেলায় অনেকেই। আর একবার হাত মিলালেন তো ফেসে গেলেন। ফিরে আসার পথ নেই আর। পরবর্তীতে তথ্য ফাস বা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ব্লাকমেইল শুরু হয় বা বড় ধরনের ক্ষতির হুমকি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট এর পোস্টার বয় সাকিব-আল-হাসান ও করেছিলেন একই ভুল। দিপক আগারওয়াল এর সাথে তিন বার যোগাযোগ করেছিলেন। ডিলেট করেছিলেন কিছু ম্যাসেজও। দেখাও করার কথা হয়েছিল তাদের মধ্যে। উল্লেখ্য যে প্রতি সিরিজ বা বড় কোন ইভেন্টের পূর্বে ম্যাচ পাতানোর বেপারে আকসু কর্তৃক সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এমনকি দেখানো হয় বুকিদের ছবিও। আর ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেলে কি করণীয় তাও বলে দেয়া হয়। এতকিছুর পরেও সাকিব-আল-হাসান কি ভুল করলেন তা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক। যদিও আর্থিক লোভ নাকি ক্ষতির আশংকা থেকে তিনি এমন করেছেন তা অবশ্যয়ই তিনি ছাড়া নেউ বলতে পারবেন না।

চলতি বছরে গ্রেপ্তার হওয়া সঞ্জীব চাওলা ইন্ডিয়া পুলিশকে দেয়া স্বীকারোক্তিতে প্রায় বোম ই ফাটালেন। তার ভাষ্যমতে ১০০% ম্যাচে কোন না কোন ভাবে স্পট ফিক্সিং করা হয়ই। আর কেউ যদি তথ্য ফাস করতে চায় তাহলে পড়তে হবে বড় ক্ষতির সম্মুখে। D-Company এর এজেন্ট রা কারো সাথে যোগাযোগ করার শুরু থেকেই তার প্রতিটা পদক্ষেপ নজরদারিতে রাখে।

হ্যান্সি ক্রোনিয়ে যখন সবার সামনে স্বীকারোক্তিতে অনেক তথ্য ফাস করে দেয় তার কিছুদিন পরেই কাকতালীয় ভাবে প্লেইন দূর্ঘটনায় মারা যায়। সবার কাছে দূ্র্ঘটনা মনে হলেও অনেকের কাছেই এটি পরিকল্পিত হত্যা। যদিও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই সবকিছু জল্পনা -কল্পনাতেই থেকে গেছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের আয়ারল্যান্ড এর সাথে পরাজয় এর পরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়ার রাতেই হোটেলে খুন হন পাকিস্তানি কোচ বব উলমার। অনেকের ধারনা ম্যাচ টি পাতানো ছিল এবং উলমারের কাছে এমন কিছু তথ্য ছিল যা সে ফাস করতে চেয়েছিল যার কারনেই এই করুন পরিনতি হয়েছিল তার। এক যুগ পাড় হয়ে গেলেও সেই মৃত্যু আজও রহস্য।

D-Company অর্থাৎ দাউদ ইব্রাহীম এতটাই শক্তিশালী যে কিনা পুরো সিস্টেম কে কন্ট্রোল করে ক্রিকেট কে আংগুলের মাথায় করে নাচাতে পারে। পুরো বিশ্বের পুলিশের হিটলিস্টে থাকা দাউদ ইব্রাহীম এর D-Company যেন ক্রিকেটের জন্য এক বিভীষিকার নাম।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *